কুলাউড়ায় আটককৃত ‘জঙ্গিদের’ নিয়ে পাহাড়ে সিটিটিসি’র অভিযান
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের গৃহীন পাহাড় থেকে নেমে আসা ১৭ জন নতুন জঙ্গিদের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিট। গত ১৪ আগষ্ট সোমবার সকালে ইমাম মাহমুদের কাফেলার প্রধান জুয়েল মাহমুদ সহ ১৭ জন জঙ্গিকে সাহসী ৪ জন সিএনজি (অটোরিকশা) চালক সহ স্থানীয় জনতা কৌশলে আটক করে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে ধরিয়ে দেন। যার মধ্যে সংগঠনের প্রধান ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন একজন এমবিবিএস ডাক্তার ও চীনে মাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাশ করা দুই প্রকৌশলী। এই দুই প্রকৌশলীর মধ্যে এক জন ১ মাস এবং অন্য জন ১১ দিন আগে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন।
.
যে ভাবে জনতার হাতে আটক জঙ্গিরা : সোমবার সকালে সংগঠনের প্রধান পক্ষাঘাত জুয়েল মাহমুদ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকি সদস্যরা তাকে কাঁধে নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসতে থাকেন, এসময পাহাড়ে স্থানীয় এক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বনায়ন কর্মীর সাথে দেখা হলে তারা তাকে পাশ্ববর্তী জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে যাওয়ার রাস্তা টি কোনদিকে তা দেখাতে বলেন, এসময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক এবং অন্য অঞ্চলের ভাষা হওয়াতে সে কৌশলে ঘনবসতিপূর্ণ বাজারের রাস্তা দেখিয়ে দ্রুত নিচে নেমে এসে স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বিষয়টি অবহিত করে। পরে জঙ্গিরা পাহাড় থেকে নিচে নেমে এসে গাড়ি খুঁজতে লাগলে স্থানীয় চার সিএনজি অটোরিকশা চালক আব্দুল কুদ্দুস, রবু উল্লাহ, সাইফুর ও লকুছ কৌশলে ১৭ জঙ্গিকে গাড়িতে তুলে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায় এবং পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে প্রথমে কুলাউড়া থানার পুলিশ গিয়ে তাদের তালাবদ্ধ করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় সোয়াট পুলিশ নিয়ে (সিটিটিসি) প্রধান মো, আসাদুজ্জামান কুলাউড়ায় পৌঁছে ১৭ জঙ্গিকে মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তথ্য উদঘাটন করে পরদিন মঙ্গলবার সকালে ১৫ জঙ্গিকে মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে নিরাপত্তায় রেখে ২ জঙ্গি সদস্যকে সাথে নিয়ে সরেজমিন কুলাউড়ার সীমান্তবর্তী গৃহীন কালাপাহাড়ে অভিযানে নামে। সেখানে পাহাড়ের চূড়ায় তাদের আরেকটি গোপন আস্তানার সন্ধান পায় সিটিটিসি। সেই জঙ্গি আস্তানা থেকে বিশেষায়িত ফোর্স অনুসন্ধান চালিয়ে দুটি ঘর থেকে ছয় কেজি বিস্ফোরক, ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, নগদ ২ লাখ টাকা, দুটি বড় দা, ৯৫টি ডেননেটার উদ্ধার করা হয়। পরে দুই জঙ্গিকে সাথে নিয়ে বিকেলেই মৌলভীবাজার ফিরে পুলিশ।
ওইদিন মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলনে ‘অপারেশন হিলসাইড’ এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
এদিকে যে চার সিএনজি অটোরিকশা চালক সাহসীকতার সাথে ১৭ জঙ্গিকে গাড়িতে তুলে কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদে এনে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে সেই চারজনকে (সিটিটিসি) পুলিশ পুরস্কিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে (১১ আগস্ট) শনিবার কর্মধা ইউনিয়নের বাইশটিলার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নারী পুরুষ সহ ১০ জঙ্গি এবং ৩ শিশু কে আটক করে সোয়াট পুলিশ। ধারনা করা হচ্ছে সেই সময় ওই আস্তনা থেকে ১৭ জঙ্গি পালিয়ে পাহাড়ের অন্য আস্তানায় আত্মগোপনে ছিলো। তাদের খাওয়া দাওয়ার সরঞ্জাম শেষ হয়ে গেলে জঙ্গিরা নীচে নেমে আসতে শুরু করে।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ১৪ আগষ্ট সকালে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজারের স্থানীয় মানুষ ১৭ জন ব্যক্তিকে আটক করেন। এই খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের টিম গত ১১ আগষ্ট শনিবার যে আস্তানায় অভিযান চালায়- তারা সেখান থেকে আটককৃতদের সহযোগী বলে আমরা নিশ্চিত হই।
সিটিটিসি প্রধান আরো বলেন, আমরা ১৫ আগষ্ট মঙ্গলবার ভোরে ওই আস্তানা সন্ধানের জন্য বের হয়ে দুর্গম প্রায় ২০টি পাহাড় পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হই। আটক ১৭ জন সবাই স্বীকার করে তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য।