মৌলভীবাজারের ৫ উপজেলায় বন্যার পানি বৃদ্ধি চরম ভোগান্তিতে বানবাসীরা
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজারে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার শহরের মনু সেতুর কাছে চাঁদনীঘাটে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং সদর উপজেলার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারার পানি উপচে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জনপদে প্রবেশ করেছে। এ এলাকায় কুশিয়ারার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। গ্রামীণ সড়কটিই প্রতিরক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নতুন করে ভাঙনের ফলে আশপাশের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে মৌলভীবাজারে মনু, কুশিয়ারাসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। মনু নদের পানি মৌলভীবাজার শহরের মনু সেতুর কাছে সোমবার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৯ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। একই জায়গায় মঙ্গলবার সকালে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অন্যদিকে সদর উপজেলার শেরপুরে সোমবার সন্ধ্যায় কুশিয়ারা নদীর পানি ছিল ৮ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার বা বিপৎসীমার নিচে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় সেখানে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালের দিকে হামরকোনা মসজিদের কাছে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে গ্রামের ভেতর পানি প্রবেশ করছে। ধলাই নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি অনেক দিন ধরেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টায় জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বন্যা কবলিত এলাকা ও উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় আবারও বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও রাজনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার রূপ নিয়েছে। ২ সপ্তাহের অধিক সময় থেকে পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে কুলাউড়া পৌর সাভার ৫টি ওয়ার্ড, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ, জুড়ী উপজেলা পরিষদ সহ ওইসব এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা ঘাট।
বৃষ্টিপাতের কারণে কুশিয়ারা, জুড়ী, ফানাই ও আন ফানাই নদী দিয়ে ঢল নেমে বন্যার পানি বৃদ্ধি পায়। সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এসব এলাকার পানিবন্দি সাধারণ মানুষ এখন চরম ভোগান্তি পড়েছেন। বন্যার কারণে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন তাদের বাড়ি ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত রয়েছে। সরকারি হিসেবে ৩ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্ধি রয়েছেন। দীঘদিন বাড়ি-ঘর পানির নীচে তলিয়ে থাকায় সেগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় স্যানিটেশন, শিশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।
কুলাউড়া : ভারী বর্ষণে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে হাকালুকি হাওর। কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলায় হাকালুকি হাওর পারের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্লাবিত গ্রামগুলোতে নতুন করে পানি প্রবেশ করছে। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ এলাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরসহ আবাসিক এলাকা।
গত ১৬ দিন ধরে বন্যার পানিতে সরকারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ও উপজেলা প্রশাসনিক অফিসসহ আশেপাশের আবাসিক এলাকা নিমজ্জিত থাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও সরকারি দাপ্তরিক কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। পানিবন্দি থেকে চিকিৎসা সেবা ও উপজেলা প্রশাসনিক কাজ-কর্ম করছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। এতে সরকারি অফিস ও হাসপাতালের সেবা গ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
এদিকে বন্যায় মানুষের জীবনরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশ মুখে পানিময় দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে রোগীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান আখই, ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন সুমন ও আব্দুল কাইয়ুম এর অর্থায়নে হাসপাতালের সম্মুখে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয়েছে ৩০০ ফুট লম্বা ভাসমান অস্থায়ী সেতু। বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের খাঁচার ওপর বাঁশকাঠ লোহা ও রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়।
যাতে করে অনায়াসে লোকজন তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন। ১৭ জুন থেকে এখনও হাকালুকি হাওরের বন্যার পানিতে কুলাউড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে ডুবে আছে। ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৬৩ জন মানুষ ও উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।