পৃথিমপাশা ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলনে মসজিদ পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবী

দক্ষিণ ভাটগাঁও মসজিদ সম্প্রসারণে বাঁধা দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অপপ্রচার

মসজিদ সম্প্রসারণে বাধা, টাকা আত্মসাৎ এবং জায়গা দখলসহ নানা অপপ্রচার –সংবাদ সম্মেলনে পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবী কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের নামে এক প্রতিবাদ সভায় মসজিদ সম্প্রসারণে বাধা, টাকা আত্মসাৎ এবং জায়গা দখলসহ মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম. এস জামান লিখিত বক্তব্যে বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সহিত আমি এই দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার পিতা আলহাজ্জ আব্দুস শুকুর পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। আমি এবং আমার আরেক ভাই শিক্ষকতা পেশায় রয়েছি। আমার আরও দুই ভাই ও মা-বাবা দেশের বাইরে থাকেন। আমাকে এবং আমার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে দক্ষিণ ভাঁটগাও জামে মসজিদের কথিত সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, তার ভাই নুরুল ইসলাম সিকন, ছেলে মনিরুল ইসলাম তানিম, ভাতিজা সামসুল আরেফিন কামাল ও সুমেল আরেফিন গংরা আমার বিরুদ্ধে মসজিদ সম্প্রসারণে বাঁধা ও মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত ২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ভাঁটগাও জামে মসজিদের সামনে মানববন্ধনের নামে প্রতিবাদ সভা করেন। ওই সভায় শুধু তাদের পরিবারের লোকজনসহ তাদের দোকানের কর্মচারী ও ভাড়া করা কিছু লোক উপস্থিত ছিলেন।”

এম এস জামান বলেন, “মসজিদ সম্প্রসারণ কাজে বাধা দেওয়ার মতো অনৈতিক কাজ আমার পরিবার আমাকে শিক্ষা দেয়নি। মসজিদের ভিতরে মুসল্লীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ সম্প্রসারণ কাজ হবে। মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন ব্যাংকের হিসাব শাখার মাধ্যমে দেওয়া হয়। এখানকার যাবতীয় কিছু দেখভাল করে মসজিদ পরিচালনা কমিটি। এখানে ব্যক্তিগতভাবে আমার বাধা দেওয়ার কিছু নেই।”

তিনি বলেন, “শিক্ষকতা আমার পেশা। এর বাহিরে আমার কোন পরিচয় নেই। আমি কোন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে কোন কাজ করেছি বলে কেউ প্রমাণ দেখাতে পারবে না। তাছাড়া আমি কিংবা আমার পরিবারের কোন সদস্য কোনদিন কারো বিরুদ্ধে হামলা-মামলার সাথে জড়িত থাকার কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু মসজিদ কমিটির কথিত সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও গংরা আমাকে এবং আমার পেশাকে কলুষিত করতে মানববন্ধনের নামে প্রতিবাদ সভায় আমাকে মামলার আসামী ও দলিলদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করে মিথ্যাচার চালিয়েছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রকৃতপক্ষে আমি কোন মামলার আসামি নয় এমনকি দলিল দাতা নয়।”

তিনি বলেন, মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয় ৪৯৩৩ দাগ পুকুর দুই শতক ভূমি মবই দান করেছেন। কিন্তু এসএ ৯৪৬নং রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত দাগের মালিক করামত উল্যা ও আবুল গং মবই নামের ব্যক্তির সাথে রেকর্ডিয় মালিকের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি বলেন, “কমিটির কোষাধ্যক্ষ রিয়াজ উল্যার কাছ থেকে মসজিদে চাঁদা সংগ্রহের টাকা আমি স্বাক্ষর সহকারে নিয়ে পরবর্তীতে ব্যাংকে জমা দিয়ে রসিদ সংরক্ষণ করি। তাছাড়া প্রতিবছর ব্যাংক স্টেটম্যান্ট সহকারে কার্যকরী কমিটির সভায় কোষাধ্যক্ষ রেজিষ্টারে হিসাবে মিলিয়ে রাখা হয়। মসজিদের নামীয় হিসাব শাখা থেকে ইমামের বেতন ছাড়া এখন পযর্ন্ত কোন টাকা উত্তোলন করা হয়নি। ব্যাংকে মসজিদের নামীয় হিসাব শাখা নম্বরটি কমিটির সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। এখানে টাকা আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই এবং এই অভিযোগও সঠিক নয়।”

তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মসজিদ প্রাঙ্গণে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ তমছির আলী ওরফে মাসুক মিয়াপ সভাপতিত্বে ও সম্পাদক এম. এস জামানের পরিচালনায় মসজিদ পূনঃনির্মাণের লক্ষ্যে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত মুসল্লিগণ অন্যান্য ভূমি ওয়াকফ করার পূর্বে অত্র মসজিদের মূল তিন শতক ভূমি বিনা দলিলে দান লেখা থাকায় ওয়াকফ নয় মুসল্লিগণ মসজিদের মূল ভূমির বিতর্ক অবসানের জন্য ৪৯৩২ দাগের ভূমির প্রকৃত মালিকগণ সৈয়দ মনোহর আলী গং ও করামত উল্ল্যা গং এর উত্তরাধীকারীগণকে ওয়াকফ দলিল করে দিতে অনুরোধ করেন। সভায় মূল ভূমি ওয়াকফের সিদ্ধান্ত হয়। মুসল্লিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকৃত দাতাগণের উত্তরাধীকারীগণ ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি দক্ষিণ ভাটগাও জামে মসজিদের পক্ষে দান দলিল ১৪৪/২২ সম্পাদন করে দেন।

এম এস জামান আরো বলেন, ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি সৈয়দ তমছির আলী ওরফে মাসুক মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক এম এস জামানের পরিচালনায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দলিল উপস্থাপন করলে কথিত সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক গংরা উত্থাপিত দলিলের বিরোধিতা করেন। পক্ষান্তরে কমিটির সম্পাদক এম.এস জামান মসজিদের স্বার্থে পরবর্তী বৈঠকে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে যে রায় দিবেন তা সকলে মেনে নিয়ে মসজিদ নির্মাণ করার আশ্বাস দেন। যা সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক গংরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা মসজিদে পারিবারিক প্রভাব বিস্তার করতে মুসল্লিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পূর্বের তারিখ (২০২০ সাল) দেখিয়ে ২০২২ সালে একটি ভুয়া কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির মাধ্যমে ২০২২ সালে কোর্টে স্বত্ব মামলা (৭৫/২২) দায়ের করেন। বর্তমানে ওই মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।

তাছাড়া ২০২২ সালের ২৫ মে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আব্দুর রাজ্জাক গংরা দলিল জালিয়াতির আবেদন করলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যৌথভাবে শুনানী করেন। শুনানী শেষে তারা জানান, দলিল সম্পাদনের ফলে মসজিদ নির্মাণে ভবিষ্যতে আর কোন বাধা থাকবে না। এখানকার মুসল্লিগণও নিরাপদ থাকবেন। যা আইনগতভাবে সঠিক হয়েছে। তৎসময় এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে আব্দুর রাজ্জাকের ভাই নুরুল ইসলাম সিকন বাদী হয়ে একটি ফৌজধারী মামলা (২৪৭/২২) দায়ের করেন। যা আদালতের আদেশে মামলাটি স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ জুন কুলাউড়ার থানার ওসির তত্বাবধানে তদন্ত ওসি আমিনুল ইসলাম ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. জিমিউর রহমানের মধ্যস্থতায় সালিসী বৈঠকের একটি আপোষনামায় উভয়পক্ষ স্বাক্ষর করেন। ওই আপোষনামায় উল্লেখ করা হয়, বৈঠক পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে সি.আর ফৈৗজধারী মামলা (২৪৭/২২) প্রত্যাহার করার পর অন্যান্য ভূমি ওয়াকফ করে মসজিদ সম্প্রসারণের কাজ চলবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটিও অমান্য করা হয় এবং মামলা চলমান থাকে।

তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে দক্ষিণ ভাঁটগাও জামে মসজিদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। মসজিদের অনুকুলে অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে ইমাম সাহেবের বেতন দেওয়া হয়। তাছাড়া ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে শিশুশিক্ষা এমনকি দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলি ট্রাস্টের এবং বিভিন্ন সরকারী অনুদানের টাকা মসজিদের এই হিসাব শাখায় জমা হয়। হিসাব শাখার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রমজান আলী, সাধারণ সম্পাদক এম এস জামান এবং কোষাধক্ষ্য সৈয়দ কায়েদ মিয়া রয়েছেন।
এম এস জামান বলেন, মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ রিয়াজ উল্যা ২০২২ সালের ২২ জুলাই মুসল্লিগণের উপস্থিতিতে কমিটির সভাপতি মাসুক মিয়া এবং সম্পাদক এম এস জামানের কাছে মসজিদের হিসাব-নিকাশ হস্তান্তর করে কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক গংয়ের কাছে মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন বাবৎ তখন ৪৬,০৩০ টাকা (ছেচল্লিশ হাজার ত্রিশ) বকেয়া ছিল। যা রিয়াজ উল্যা স্বাক্ষরিত তালিকায় টাকার হিসাব না দিয়ে তিনি তা আত্মসাত করেন।

তিনি আরো বলেন, আব্দুর রাজ্জাক গং, নোয়াব উল্যা গং ও তোরাব উল্যা মসজিদের ৪৯৩২ দাগে মালিকানা রয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু নোয়াব উল্যা গং ও তোরাব উল্যা উত্তরাধীকারী মালিকগণ করামত উল্যা ও সোম উল্যাকে মালিক স্বীকৃতি দিয়ে এসএ ৯৪০নং খতিয়ানের ৪৯৩২ দাগের মসজিদ রকম তাদের কোন মালিকানা পূর্বেও ছিল না বর্তমানেও নেই বলে জানান। এস.এ মালিক উস্তার মিয়ার উত্তরাধীকারী আব্দুর রহমান ৫০১৯/২২নং, তোরাব উল্যা উত্তরাধীকারী জুবের আহমদ, মতিউর রহমান, মোস্তাকিম আলী ৫১৩০/২২নং, নেওয়া বিবির উত্তরাধীকারী সৈয়দ ওলিউর রহমান, লাল বিবির উত্তরাধীকারী মকবুল আলী ৬৩৩৫/২২ নং ঘোষনাপত্র দলিলমূলে করামত উল্যা ও সোম উল্যার স্বত্ব সম্পর্কে নিয়ত স্বীকৃত রয়েছে।

এম এস জামান আরো বলেন, ২০২২ সালে শামসুল আরেফিন কামালের প্ররোচনায় তিনি নিজে কামাটর সম্পাদক, তার চাচা আব্দুর রাজ্জাক সভাপতি, ছোট চাচা নুরুল ইসলাম সিকন সহসভাপতি এবং রিয়াজ উল্যাকে কোষাধ্যক্ষ করে পারিবারিক কমিটি গঠন করা হয়। যদিও কথিত ওই কমিটি ২০২০ সালে গঠন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন মুসল্লিগণের স্বাক্ষর জাল ও প্রতারনার জন্য পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। এই কথিত সভাপতি রাজ্জাক, সম্পাদক কামাল তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশে মসজিদে প্রভাব বিস্তার করতে তাদের গোত্রের সন্ত্রাসীদের দিয়ে মসজিদে ঈদের জামাতে বাঁধা, ইমাম তাড়ানো ও মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। এতে মুসল্লিগণ কুলাউড়া থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনাকে কেন্দ্র করে এমনকি পারিবারিক দ্বন্দ্বকে জড়িয়ে আব্দুর রাজ্জাক গংরা মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আসামী করে মামলা দায়ের করে হয়রানির শিকার করেছেন। ওই মসজিদের সাবেক ইমামকেও অশালীনভাবে গালিগালাজ করে তাকে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেন তারা। আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বাড়িতে আক্রমন এবং বাড়ির সিএনজি গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাছাড়া তারা আমার বাড়ির খাবার পানির ট্যাংকেও বিষ প্রয়োগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিরেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. রমজান আলী, সহ-সভাপতি মাসুক মিয়া, সহসম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ কায়েদ মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জামাল মিয়া, প্রচার সম্পাদক মো. মাহমুদ আলী ও সহ-প্রচার সম্পাদক মো. আরজান উল্লা প্রমুখ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *