চাচি-ভাতিজার প্রেমের বলি চাচা

মৌলভীবাজারে চাচি-ভাতিজার প্রেমের বলি চাচা, হাসপাতালে বেডে কাতরাচ্ছেন একাদিক; হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচারের দাবী এলাকাবাসীর

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হিলালপুর এলাকায় দুই পক্ষের পূর্ব বিরোধের জের ধরে সালিশ বৈঠকে চলাকালে সংঘর্ষে বারভেজ খুন ও গুরুত্বর আহত ১৫জন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ও সিলেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে মুত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। বৃহষ্পতিবার বিকেলে সালিশ বৈঠক চলাকালে ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতংকের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বিকেলে সিলেট হাসপাতালে পোষ্টমন্ডেম শেষে বাড়িতে লাশ নিয়ে আসলে নেমে আসে শোকের মাতম। বারভেজ ছিলেন পরিবারের আয় রোজগারের একমাত্র ভরসা। স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনের আহাজারীতে স্বদ্ধ পরিবারে নেমে এসেছে করুন আর্তনাদ। স্ত্রী-সন্তানের হাহাকারে এলাকাজুড়ে শোকে কাতর। হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের দাবী পরিবার ও এলাকাবাসীর।

২৬সেপ্টেম্বর বস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মৌলভীবাজার শহরতলীর হিলালপুর গ্রামে তারা মিয়ার বাড়ীতে মৃত চাচার স্ত্রীর সাথে ভাতিজার প্রেম করে বিয়ের ঘটনা নিয়ে সালিশ বৈঠকে হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলার ঘটনায় একজন নিহত ও গুরুত্বর ১৫জন আহত হন। মৃত রুবেল মিয়ার স্ত্রী আফছানা বেগম মিমি ভাতিজা সামাদ মিয়ার সাথে প্রেম করে বিয়ের বিষয়টি তাদের পরিবার কোন ভাবে মেনে না নেওয়ায় বিষয়টি সমাধানের জন্য সামাদ মিয়া ও তার সহযোগীদের নিয়ে তারা মিয়ার বাড়িতে এক সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। সালিশ বৈঠক চলাকালে পূর্ব থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ওৎ পেতে থাকা সামাদ, সুফিয়ান মিয়া, আজাদ মিয়া, রিপন মিয়া, শিপন মিয়াসহ ২৫/৩০জন এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এতে গুরুত্বর আহত হন- বারভেজ আহমদ, তার বড় ভাই পীর আজাদ, মা পাতই বিবি ও ভাতিজা আছাদ মিয়াসহ আরো ১৫জন। আহতদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে গুরুত্বর আহত বারভেজ আহমদ ও তার মা’সহ অপর দুই ভাইকে সিলেট এম.এজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। বৃহষ্পতিবার রাত ৮টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জরুরী বিভাগে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক বারভেজ আহমদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি আহতরা স্থানীয় ও সিলেট হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এদিকে সালিশ বৈঠক ডাকা তারা মিয়া গংরা পূর্ব পরিকল্পনা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ নিহতের পারিবারের।

উল্লেখ্য যে, ২০১৮সালে রুবেল মিয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হওয়ার পর সামাদ মিয়া (ভাজিতার) সাথে পরকিয়া প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে নিহতের স্ত্রী আফসানা বেগম মিমি। এক পর্যায়ে চাচী ভাতিজা বিয়ে করায় তাদের পরিবার মানতে নারাজ হওয়ায় বৃহষ্পতিবার সালিশ বৈঠক বসে স্থানীয় তারা মিয়া বাড়িতে। বৈঠক চলাকালে হঠাৎ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে স্ত্রী আফসানা বেগম মিমি নতুন স্বামী সামাদ মিয়া ও তার দলবল হামলা চালায় বারভেজ মিয়া সহ তার দুই ভাই ও মায়ের উপর। এসময় বারভেজ মারা গেলেও মা-ভাইসহ অন্তত ১৫জন মারাত্মক আহত হয়।

এদিকে নিহত বারবেজ এর মেয়ে তিনজন রিয়া, প্রিয়া ও কেয়া, স্ত্রী সেলি বেগম, এলাকাবাসী বলেন- নিহত বারভেজ এর স্ত্রী সেলি বেগম ও সন্তানদের অভিযোগ বারভেজ কে বৃহস্পতিবার বৈঠকে তারা মিয়া গংরা সালিশের নামে নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে ও পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এলাকার তারা মিয়ার বাসায় বৈঠকে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। তারা মিয়া উভয় পক্ষকে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা বললে সেখানে বারভেজ,পীর আজাদ,মা পাতই বিবি ও ভাতিজা আছাদ মিয়াসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোকজন উপস্থিত হন। নিহতের ভাতিজা সামাদ মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, আজাদ মিয়া, রিপন মিয়া, শিপন মিয়াসহ অন্যান্যরা পূর্ব থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ওৎ পেতে থেকে হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি হামলায় বারভেজ নিহত ও দুই ভাই মা’সহ ১৫ জন মারাত্মক আহত হন। কিন্তুু তারা মিয়ার বাড়িতে বিচারিকরা কেহ প্রতিবাদ বা কোন বাঁধা না দিয়ে বাসার ভেতরে চলে যান। আমাদের ধারনা সালিশ বৈঠক ডাকা তারা মিয়া গংরা পুর্ব পরিকল্পনা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এবিষয়ে মোঃ আজমল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনা স্থলে পুলিশের একটি টিম গিয়েছে। হামলার সাথে জড়িত আজাদ মিয়াকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে ও নিহতের পরিবার একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন, পুলিশ বিষয়টির সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে নিহতের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তার এক ভাতিজার সাথে বিয়ে হওয়ায় পরিবার মেনে নেয়নি। তাই সালিশ বৈঠক বসে ও সেখানেই হামলা হলে একজন মারা যান ও অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবী অবিলম্বে হত্যাকারীসহ পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারসহ বিচার হোক এমনটাই প্রত্যাশা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *